জসিম উদ্দিন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম ভিন্ন হলেও দু’ ইউনিয়নের দশ গ্রামের মানুষের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের এক নিবিড় সম্পর্ক শুধুমাত্র ইউনিয়ন দু’টির সংযোগস্থলে খালের ওপরে একটি মাত্র ‘বাঁশের সাঁকো’ নামক সেতু বন্ধনের মধ্য দিয়ে। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের খারিজ্জমা গ্রাম ও পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের চরবলইকাঠি গ্রাম। এ দু’টি গ্রামের সংযোগস্থলে খালের ওপরে বাঁশের সাঁকোটি এখন এ দু’ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ সেতুর অভাবে স্থানীয়ভাবে বাঁশ দিয়ে নির্মিত ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছে। খালটির এ পাড়ে খারিজ্জমা কলেজ, খারিজ্জমা ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এসএসসি পরিক্ষার কেন্দ্র ও ব্যবসা বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু সহ কয়েকটি গুরত্বপূর্ন স্থানের সাথে যোগাযোগের জন্য পারাপার হওয়ার সময় অনেকেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। ওই খালের ওপর ব্রিজ নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দশ গ্রামের অন্তত বিশ হাজার মানুষের জীবন-যাত্রার মান। পাশাপাশি বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে তারা দাঁড়াতে পারবে নিজেদের পায়ে, স্বচ্ছল হবে শত শত পরিবার। জানা গেছে, ওই খালের ওপর স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এলাকাবাসী একটি ব্রিজের দাবি করলেও দীর্ঘ সময়ে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এর বদলে গ্রামবাসীরা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে পেয়েছে শুধুই আশ্বাস। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর স্থানীয়ভাবে ২০১৪ সালে গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রম এর মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোগে নির্মাণ করেছে বাঁশের সাঁকো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই সাঁকো নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ঝুঁকিপুর্ণ সাঁকো দিয়েই বাধ্য হয়ে চলাচল করছে মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, খারিজ্জমা-চরবলইকাঠি সংযোস্থলে খালের ওপরে একটি ব্রিজ নির্মান করা হলে এখানকার জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে। খালের ওপাড়ে কোন হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বাজার না থাকায় মুমূর্ষু রোগীর জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও ওই নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে হাসপাতালে নেয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়ে। খালের এ পাড়ে খারিজ্জমা এলাকায় চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী, শতশত ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার পথচারি প্রতিনিয়ত ওই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। খারিজ্জমা ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার এ প্রতিবেদককে জানায়, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হই। এই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো। এ বিষয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের জনশক্তি উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জানান, বাঁশের সাঁকো নির্মাণের পূর্বে মানুষ খেয়া নৌকায় পারাপার হতো। এতে করে মাঝে মধ্যে নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটতো। সাঁকোটি বর্তমানে নড়বড়ে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই খারিজ্জমা-চরবলইকাঠি সংযোগ স্থলে খালের ওপরে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা খুবই জরুরী। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
