নিয়ামুর রশিদ শিহাব, গলাচিপা(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা ঃ
প্রায় ৩০ বছর আগের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন সংস্কার না করার কারণে পটুয়াখালী জেলায় বিদ্যুৎ সরবারহ মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছে। নদী বেষ্টিত অঞ্চল এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় লোকবল না দিয়ে বিমাতাসূলভ আচরণ, নতুন লাইন নির্মাণে মানসম্মত মালামাল না লাগানো এবং মনিটরিং না করা, অপ্রতুল যানবাহন এবং ত্রিমূখী লাইনের সংযোগস্থলে অটো সার্কিট রি-ক্লোজার না লাগানোর ফলে যে কোন সময় সমগ্র পটুয়াখালী জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। ফলে এ সময় কয়েক লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক চরম দুর্ভোগে পড়তে পারেন বলে আশংকা করা হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রায় ৪০ বছর পূর্বে ভেড়ামারা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীতে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন টানা হয়েছিল। এরপর ভোলা থেকে পটুয়াখালী গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। এখন বরিশাল থেকে পটুয়াখালী গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। এর বেশ কিছু দিন পর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে ওই লাইন হস্তান্তর করা হয়। পল্লী বিদ্যুতের কাছে লাইন হস্তান্তর করার পর থেকে ব্যাপক হারে গ্রাহক বেড়ে যায়। পল্লী বিদ্যুতের ওয়েব সাইট থেকে জানা গেছে, বর্তমানে পটুয়াখালীর ৮টি উপজেলাড ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪১২ জন গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবারহ দিতে লাইন টানা হয়। এই বিদ্যুৎ লাইনগুলো বেশিরভাগই গাছগাছালি এবং খাল-নদী-বিলের মধ্য দিয়ে টানা হয়েছে। সামান্য ঝড় বাতাসে তার ছিড়ে প্রায়শ:ই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। এসময় প্রয়োজনীয় লোকবল, অপ্রতুল যানবাহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে লাইন মেরামত করে গ্রাহকদের সঠিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। অপরদিকে লোকবল নিয়োগেও কর্তৃপক্ষ বিমাতাসূলভ বন্টন করছেন। পল্লী বিদ্যুতের ফেনি ওয়েব সাইটে (পিবিএস.ফেনি.গভ.বিডি) দেখা গেছে, ফেনি পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ৬টি উপজেলায় ৬ হাজার ৮৯ কিলোমিটার লাইন রয়েছে। সেখানে লোকবল রয়েছে ৫২৭ জন। ঢাকা পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ২ হাজার ৭৮১ কিলোমিটার লাইনের জন্য লোকবল রয়েছে ৬৯৩ জন। পক্ষান্তরে পটুয়াখালীতে ৮টি উপজেলার জন্য রয়েছে মাত্র ৪১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে নদী ও গাছগাছালি বেষ্টিত লাইনের কাজ দ্রুত করার তাগিদে অনেক সময় বিদ্যুৎকর্মীরাও দুর্ঘটানার শিকার হচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লী বিদ্যুতের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, পটুয়াখালীর লোহালিয়া এলাকা থেকে বাউফল ও গলাচিপা উপজেলার লাইন ভাগ হয়েছে। গলাচিপা কিংবা বাউফলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছের কোন ডালপালা পড়লে কিংবা কোন কারণে তার ছিঁড়ে গেলে গোটা বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ওই ক্রটি খুঁজে বের করতে কোন কোন অবস্থায় দিন-রাতও পার হয়ে যায়। ফলে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। এক্ষেত্রে গলাচিপা ও বাউফলের লাইনে অটো সার্কিট রি-ক্লোজার বসানো খুবই জরুরী। এছাড়া বরিশাল থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত হাই ভোল্টেজের যে সরবরাহ লাইন টানা হয়েছে সে লাইনেও প্রায়শ:ই তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ওই লাইনের তার বহু দিন আগের হওয়ায় তারের ধারণ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে এতে বেশি বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে বলে তারা জানান। অপরদিকে সরকারের নির্দেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযাগ দিতে ঠিকাদাররা দ্রুত খুঁটি ও তার টেনে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে মান সম্মত মালামাল দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। নতুন ওই সকল লাইনে কাজ করার সময় কোন মনিটরিংও হচ্ছে না। এরফলে ঠিকাদাররাও সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে। অনেকে জানান, আগে ইন্সুলেটর লাগালে এক বছরেও হাত লাগাতে হতো না। এখন ইন্সুলেটরের কোন গ্যারান্টি নেই। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অন্যতম একটি প্রধান কারন ইন্সুলেটর পুড়ে যাওয়া। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসিরা মনে করেন, বিদ্যুৎ লাইন, লোকবল, নতুন লাইনের মনিটরিং এবং মান সম্মত মালামাল স্থাপণে জরুরী ভিত্তিতে গুরুত্ব¡ না দিলে পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে যে কোন সময় মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটতে পারে। যা সামলে উঠতে দীর্ঘদিন বিলম্ব হতে পারে।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মনোহর বিশ্বাস বলেন, আমাদের কোন লাইন জরাজীর্ণ নেই। যানবাহনও আছে। লোকবল সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ জানেন। পর্যায়ক্রমে এ সমস্যার সমাধান হবে। তবে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী আসা হাই ভোল্টেজ গ্রীড লাইনটি ৩০ বছরের পুরনো হওয়ায় মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভ্রাট হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
