আল আমিন, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে আগুনমুখা নদীর তীরের ছোটবাশদিয়া গ্রাম। শতকরা ৭০ ভাগ মানুেষর পেশা জেলে। এ পেশার ওপর নির্ভর করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। কিন্তুু ভরা মৌসুমেও উপকূলের নদ-নদী ও সাগরে রুপালী ইলিশের দেখা মিলছে না। জাল ফেলে হাতেগোনা কয়েকটা ইলিশ পাওয়া গেলেও তা বিক্রি করে জেলেদের আসা-যাওয়ার খরচই হয় না। তাই আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় অভাব-অনটন আর চরম হতাশায় দিন পার করছে জলেরো। কিভাবে এনজিওর ঋণের কিস্তি কিংবা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করবে, এমন দুশ্চিন্তায় আছে জেলেরা।
রবিবার সকালে সরেজমিনে উপকূলের পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ছোটবাইশদিয়া নামের ওই গ্রামে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। এসময় কোেটবাইশদিয়া গ্রামের এফবি জিদান নামক জেলে ট্রলারের মালিক আলাল প্যাদার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ায় এক মাস ৭দিন আগে ট্রলার নামাইছি। কিন্তু নদীতে ইলিশ নাই। গভীর সাগরে গিয়ে যা পাই, তাতে আসা-যাওয়ার খরচও ওঠে না। তিনি আরও বলেন, এ ক’দিনে ট্রলারের তেল, বাজার-সদাইসহ বিভিন্ন খরচ দিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা লোকশান হয়েছে। চলতি মৌসুমে এনজিও থেকে ৪ লাখ, মহাজনের কাছ থেকে দাদন ৩ লাখ ও দেড়া সুদে ৫ লাখ টাকা নিয়া নদীতে ট্রলার নামাইছি। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় সেই টাকা দিতে পারতাছি না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইলিশ না পেয়ে জেলেদের দুশ্চিন্তা শুধু ছোটবাইশদিয়া নয়Ñউপজেলার রাঙ্গাবালী, ছোটবাইশদিয়া, চরমোন্তাজ, বড়বাইশদিয়া ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের সর্বত্র একই চিত্র। নদ-নদী কিংবা সাগরে ইলিশ না পাওয়ায় অনেক জেলে নৌকা-ট্রলার নিয়ে হতাশ হয়ে তীরে ফিরে এসেছেন। এখন সংসারের খরচ, এনজিওর ঋণের কিস্তি কিংবা মহাজনের দাদনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন এমন দুচিন্তায় আছেন তারা। আক্ষেপ করে ছোটবাইশদিয়া গ্রামের জেলে হাসান মৃধা বলেন, নিজের সম্বল, দাদনে ৫ লাখ আর সুদে ৩ লাখ টাকা নিয়ে দুই মাস আগে ট্রলার নিয়া নদীতে নামছি। কিন্তু শুরু হইতেই মাছ (ইলিশ) নাই। খালি হাতেই ঘাটে আই। দুই মাসে আমাগো ৮ লাখ টাকার মত লোকশান ওইছে। এভাবে চলতে থাকলে দাদন আর সুদের টাকা ক্যামনে দিমুÑএই চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। এহনি সবাই টাকার জন্য চাপ দিতাছে।
স্থানীয় জেলেরা জানায়, প্রতিবছর ইলিশ ধরার মৌসুম জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে কার্তিকের শেষ পর্যন্ত। তবে এরমধ্যে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস ইলিশের ভরা মৌসুম চলে। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ পেড়িয়ে আষাঢ়ের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগর ছাড়াও উপজেলার আগুনমুখা, বুড়াগৌরাঙ্গ, দারচিরা ও রামনাবাদ নদীতে জাল ফেলে আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছে না। অথচ এইসময়ে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, শোনা যাচ্ছেÑগভীর সমুদ্রে হাইর নাম একটায় জায়গায় কিছু ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তবে নদীতে মাছ নেই। মাছতো অনেক আগ থেকেই পাওয়ার কথা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আসলে এটা পরিবর্তন হয়েছে কিনা বিজ্ঞানীরা বলতে পারবে। তবে সামনে আমবস্যা-পূর্ণিমায় গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলে মাছ আসার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।
মৎস্য গবেষকদের মতে, মে মাসের শুরুর দিকে জাটকাগুলো সমুদ্রের দিকে চলে যায়। পরবর্তীতে যখন ফিরে আসতে চায় তখন সাগর থেকে যেই জায়গা দিয়ে নদীতে মাছ ঢুকবে সেখানে বড় ফিশিং বোট দিয়ে মাছ ধরে জেলেরা, এটাই বড় বাঁধা। আবার উপকূলের নদ-নদীর মোহনায় অংসখ্য ডুবোচর জেগে ওঠায় মাছ ঢুকতেও কিছুটা বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এইসময় সমুদ্র থেকে নদীতে মাছ আসতেছে। সুন্দরবনের কিছু জায়গায় মাছ পড়তেও শুরু করেছে।